ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুনভাবে পথচলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি।

গণমিছিলের মাধ্যমে শক্তির জানান দেওয়ার প্রস্তুতি ,বিএনপির

বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় : ১০-০৮-২০২৩ ০৯:২৬:০৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০৮-২০২৩ ০৯:২৬:০৯ পূর্বাহ্ন
গণমিছিলের মাধ্যমে শক্তির জানান দেওয়ার প্রস্তুতি ,বিএনপির ফাইল ছবি :
রাজপথে ফের ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে বিএনপি। ঢাকার প্রবেশমুখে ব্যর্থ কর্মসূচির পর আগামীকাল শুক্রবার মহানগরীর দুই অংশে পৃথক গণমিছিলের মাধ্যমে শক্তির জানান দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। একই দিন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও ঢাকায় পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। এখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে টানা ১২ দিন বিরতি দিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ধারাবাহিকভাবে মাঠে নামছে দলটি। রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রতি সপ্তাহে এমন অন্তত দু’দিন মাঠে থাকার প্রাথমিক কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে তারা। এবার কোনো অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীনতা নয়; যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে চান তারা। নেতাকর্মীকে নতুন উদ্যমে চাঙ্গা করতে নেওয়া হয়েছে এ কৌশল।

বিএনপি নেতারা জানান, গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা বেশ কিছু অর্জন করেছেন। এতে যেমন নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বে অবহেলা, কোন্দলের মতো বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে, তেমনি আবার সরকারের কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়ও সারাবিশ্বে প্রকাশ পায়।

নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতারা আগামীতে পথ চলতে চান। একই রকম ভুল যাতে আগামীতে না হয়, সেদিকে কঠোর নজর দেওয়া হচ্ছে। চিহ্নিত করা হয়েছে দায়ী নেতাদের। এর মধ্যে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যদের বিষয়েও দল পর্যালোচনা করছে। মূলত, আগামীতে নতুনভাবে পথচলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নেতা সঠিক অবস্থানে না থাকলে কর্মীদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। নেতার আদর্শ, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনে দুঃসাহস না থাকলে সে নেতৃত্ব দিতে পারে না। কঠিন সময়ে নেতার নেতৃত্ব চেনা যায়। যেমন বর্তমানে বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কঠিন সময় আর আসেনি। এখন যারা সাহসিকতার সঙ্গে সামনে থাকবে, তারাই হবে প্রকৃত নেতা; বিএনপির আগামী দিনের কাণ্ডারি।

তিনি আরও জানান, বিএনপির প্রত্যেক কর্মী এখন নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযোগী। তাদের ত্যাগ, শ্রম আর দলের প্রতি কমিটমেন্টের কারণেই আজ দল এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। সুতরাং রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে সংগঠিত করা, সফল করার প্রচেষ্টাই করবেন তারা।

জানা গেছে, টানা কয়েক দিনের বিরতির পর ঘোষিত নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করছে বিএনপি। শুক্রবার (১১ আগস্ট) বাদ জুমার পর দুপুর ২টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে কমলাপুর থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত পৃথক গণমিছিলে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় নেতাকর্মীর মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছেন। সক্রিয় নেতাদের মধ্যেও শুরু হয়েছে কর্মসূচি সফলে প্রতিযোগিতা। ফলে গণমিছিলে শুধু নেতাকর্মীর উপস্থিতি নয়; সাধারণ মানুষেরও বড় অংশ হাজির হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন মহানগর নেতারা।

বিএনপি নেতারা জানান, কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত প্রস্তুতি সভা ও মতবিনিময় করা হচ্ছে।

গত মঙ্গল ও বুধবার ধারাবাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে। এসব বৈঠকে শুধু গণমিছিল নয়; আগামীতে যে কোনো কর্মসূচিতে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দেওয়া হয়েছে কঠোর বার্তা। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাদের বাধ্যতামূলক হাজিরার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে দলের কেন্দ্র থেকে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেই পড়তে হবে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায়। এমনটাই বলা হয়েছে মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। সামান্যতম গাফিলতিও সহ্য করা হবে না বলে স্পষ্ট করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। কর্মসূচি নিয়ে দলের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে আগামীতে প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীর উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

এদিকে গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নেতাদের মধ্যে চলছে পদ হারানোর আতঙ্ক। ওই দিনের কর্মসূচি ঘিরে দলের যেসব নেতা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা ও সমালোচনা। এরই মধ্যে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন এবং ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সে গুঞ্জন আরও ডালপালা গজিয়েছে। নেতাকর্মী মনে করছে, অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে দলের তদন্ত টিমের করা প্রতিবেদনে অনেকেই ফেঁসে যেতে পারে। অনেকের পদ-পদবিতেই টান পড়তে পারে। আবার অনেককে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা হতে পারে বলে মনে করছে কর্মীরা।

জানা গেছে, দলের মূল্যায়ন তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবীনসহ অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। আর অনেক নেতাকে মধ্যম মানের ভূমিকা এবং যাদের কারণে পুরো কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে তিরস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

নেতারা বলছেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতার কারণে নেতাকর্মীর সর্বাত্মক উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। লাখো লোকের সমাগমে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের পরদিন ঢাকার প্রবেশপথের প্রতিটি পয়েন্টে ৩০ থেকে ৪০ হাজার নেতাকর্মী জড়ো হবে বলে আশাবাদী ছিল বিএনপি। এমনকি এর বেশিও হতে পরে বলে ধারণা করেন অনেক নেতা। কারণ, অনেক নেতাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিজেকে অনেক বড় করে উপস্থাপন করেন দলের শীর্ষ নেতার কাছে। তাদের অনেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে হাজির হবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন। আর ওই সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হলে পুলিশ এমন মারমুখী ভূমিকায় যেতে পারত না। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। আন্দোলনের গতিপথও পাল্টে যেত বলে মনে করেন তারা।

সূত্র: দৈনিক সমকাল

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ